WB SSC 2025 rules legality Firdous Shamim statement: ২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়া ঘিরে রাজ্যে ফের উত্তাল পরিস্থিতি। বাতিল হওয়া সেই নিয়োগ প্রক্রিয়া পুনরায় শুরুর নির্দেশ দেওয়া হলেও, বর্তমান নিয়োগ রুল অনুযায়ী তা বাস্তবায়ন হলে তা হবে “আইনবিরুদ্ধ” — এমনটাই মত প্রবীণ আইনজীবী ফিরদৌস শামিমের। তাঁর মতে, নতুন রিক্রুটমেন্ট রুল অনুযায়ী যদি নিয়োগ হয়, তবে তা আদালতের নির্দেশের সরাসরি লঙ্ঘন এবং আদালত অবমাননার সামিল হবে।
প্রায়র টিচিং এক্সপেরিয়েন্স ১০ নম্বর থাকার ফলে নতুন নিয়মে ফ্রেশারদের বঞ্চনার আশঙ্কার কথা প্রকাশ করেছেন তিনি এবং প্রশ্ন উঠেছে ২০১৬ সালের নিয়োগে ২০২৫ সালের নিয়ম কি আইনসঙ্গত?
এসএসসি আগের নিয়ম ও বর্তমান নিয়ম: মূল বিতর্ক
২০১৬ সালের নিয়ম অনুযায়ী মোট ১০০ নম্বরের মধ্যে:
- রিটেন পরীক্ষায় নম্বর ছিল ৫৫
- একাডেমিক ও প্রফেশনাল কোয়ালিফিকেশনে ৩৫
- ইন্টারভিউতে ১০ নম্বর
এই পদ্ধতিতে ৯০ নম্বরের ভিত্তিতে ইন্টারভিউয়ের জন্য প্রার্থীদের তালিকা তৈরি হতো।
কিন্তু বর্তমান নিয়োগ রুলে এই গঠন পুরোটাই বদলে গেছে:
- রিটেন পরীক্ষা – ৬০ নম্বর
- একাডেমিক যোগ্যতা – ১০ নম্বর
- প্রায়র টিচিং এক্সপেরিয়েন্স – ১০ নম্বর
- ওরাল ইন্টারভিউ – ১০ নম্বর
- লেকচার ডেমনস্ট্রেশন – ১০ নম্বর
এই নতুন নিয়ম অনুযায়ী ইন্টারভিউ লিস্ট তৈরি হচ্ছে মাত্র ৭০ নম্বরের ভিত্তিতে, যেখানে আগে হতো ৯০ নম্বরের উপর। অর্থাৎ বাকি ৩০ নম্বর এমন কিছু বিষয়ের উপর ভিত্তি করে দেওয়া হবে যেগুলো সম্পূর্ণরূপে নির্ণায়কদের বিবেচনার উপর নির্ভর করে — যেমন ওরাল ইন্টারভিউ, ডেমোনস্ট্রেশন ইত্যাদি।
প্রশ্নপত্র লিক ও দুর্নীতির আশঙ্কা
ফিরদৌস শামিম আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, লিখিত পরীক্ষার গুরুত্ব বাড়িয়ে এবং একাডেমিক নম্বর কমিয়ে দেওয়ার ফলে দুর্নীতির সুযোগ আরও বেড়ে গেছে। যদি প্রশ্নপত্র আগে থেকেই কিছু প্রার্থীর হাতে পৌঁছে যায়, তবে তারা উচ্চ নম্বর পাবে এবং প্রকৃত যোগ্য প্রার্থীরা বঞ্চিত হবে।
তিনি বলেন, “একজন থার্ড ডিভিশনধারী প্রার্থী, যদি রিটেনে ভালো পারফর্ম করে ও ইন্টারভিউ বোর্ড তাকে ২০-এর মধ্যে ২০ নম্বর দেয়, তাহলে সে সুযোগ পাবে। কিন্তু একজন ভালো একাডেমিক রেজাল্টধারী যদি ওই ২০-তে কম পায়, তাহলে সে বাইরে থাকবে।”
নতুন নিয়মে ফ্রেশারদের বঞ্চনার আশঙ্কা : প্রায়র টিচিং এক্সপেরিয়েন্স ১০ নম্বর
নতুন নিয়োগ রুলে "প্রায়র টিচিং এক্সপেরিয়েন্স" এর জন্য ১০ নম্বর রাখা হয়েছে। এই পয়েন্টটি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শামিম। তিনি বলেন, এতে নতুন বা ফ্রেশার প্রার্থীরা স্বাভাবিকভাবেই বঞ্চিত হবে। যারা দুর্নীতির কারণে আগের নিয়োগে চাকরি পাননি, তারাই আবার বঞ্চিত হবেন এই এক্সপেরিয়েন্স মার্কসের কারণে।
২০১৬ সালের নিয়োগে ২০২৫ সালের নিয়ম কি আইনসঙ্গত?
ফিরদৌস শামিম বলেন, “কোনও নিয়োগ রুল ‘প্রসপেক্টিভ’ হয়, ‘রেট্রোস্পেক্টিভ’ নয়।” অর্থাৎ, ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তখনকার নিয়মই প্রযোজ্য হবে। বর্তমান ২০২৫ সালের নিয়ম দিয়ে ২০১৬ সালের বাতিল হওয়া নিয়োগ করা হলে তা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। এই নিয়ম কার্যকর হলে তা সরাসরি আদালতের আদেশের অবমাননা বলে গণ্য হবে এবং আইনি পথে চ্যালেঞ্জ করা হবে।
এসএসসি নিয়োগ বিতর্কে ফের উত্তপ্ত রাজ্য। বঞ্চিত প্রার্থীদের পক্ষ থেকে উঠছে প্রশ্ন — এই নতুন নিয়ম কি দুর্নীতিকে আরও প্রশ্রয় দেবে? আদালতের স্পষ্ট নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও কেন এমন একটি রুল কার্যকর করা হচ্ছে যা আগেকার নিয়োগের সঙ্গে সম্পূর্ণ অসঙ্গত?
ফিরদৌস শামিমের বক্তব্য অনুযায়ী, এই রুলের ভিত্তিতে কোনও নিয়োগ হলে তা আইনি লড়াইয়ের মুখোমুখি হবে এবং আদালতের দৃষ্টিতে সেটি বৈধ হবে না।
আপনার মতামত জানান:
আপনি কি মনে করেন, কলকাতা গেজেটে প্রকাশিত নতুন নিয়োগের যে নিয়ম ও নম্বর বিভাজন প্রকাশ করেছে সরকার, তা কতটা গ্রহেণযোগ্য? এতে প্রকৃত যোগ্যদের সুযোগ কমবে? নিচে কমেন্টে আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না।
কোন মন্তব্য নেই